My Story

জুবায়ের রহমান চৌধুরী

বাংলাদেশি সাংবাদিক ও উদ্যোক্তা

জুবায়ের রহমান চৌধুরী (০২ অক্টোবর ১৯৮২) বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক এবং সাংবাদিক নেতা। পাশাপাশি তিনি একজন তরুণ উদ্যোক্তাও। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি সম্মাননা ২০১৮ পেয়েছেন।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়
জুবায়ের রহমান চৌধুরী ১৯৮২ সালের ২ অক্টোবর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের মুন্সেফপাড়া বাগানবাড়ির চৌধুরী হাউজে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আবদুর রহমান চৌধুরী (১৯৮৩)। যিনি নান্নু চৌধুরী নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। মাতা বেগম আম্বিয়া চৌধুরী। পাঁচ ভাই চার বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ।

শিক্ষাজীবন
জুবায়ের রহমান চৌধুরীর পিতা ১৯৮৩ সালের ২১ অক্টোবর মারা যান। তখন তার বয়স মাত্র এক বছর। বাবার মৃত্যুর কয়েক বছর পর তার মা তাকে নানাবাড়ি সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুরে খালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে ১৯৮৭ সালে শাহজাদাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৯৩ সালে একমাত্র ছোট মামার মৃত্যুর পর ঢাকায় চলে আসেন। পরে তিনি রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসায় ভর্তি হন। ২০০০ সালে মাদরাসা শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে তিনি তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করেন।

এর পর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। সেশনজটের কারণে ঢাকা কলেজে বাংলা সাহিত্যের কোর্স সম্পন্ন না করে ভর্তি হন বেসরকারি এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে সেখান থেকেই বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন
জুবায়ের রহমান চৌধুরী বর্তমানে ‘দৈনিক দেশকাল’ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি প্রতিদিনের সংবাদ ও দৈনিক আজাদীতে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও কর্মজীবনে জুবায়ের চৌধুরী দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, দৈনিক মানবকণ্ঠ ও দৈনিক সমকালসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিকতা করেছেন।

২০০৩ সালে মাসিক চলমান শিক্ষা পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। এরপর ২০০৬ সালে দিনের শেষে পত্রিকায় মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছেন নেন। ২০০৭ সালে সাপ্তাহিক শিক্ষাবিচিত্রায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। ২০০৯ ভারতের তারা টিভিতে বাংলাদেশ টিমে কিছুদিন কাজ করেন। ২০১০ সালে পাক্ষিক নতুন গন্তব্য এবং ২০১১ সালে ঢাকানিউজ২৪ ডটকমে কাজ করেন।

২০১২ সালে নতুন পত্রিকা দৈনিক মানবকণ্ঠে এবং ২০১৩ সালে আরেকটি নতুন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশে স্টাফ ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। ২০১৫ সাল থেকে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে দৈনিক আজাদীর ঢাকা অফিসে কাজ করেন। পাশাপাশি ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের সংবাদে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন।

করোনা মহামারিতে ২০২০ সালের আগস্টে নতুন কিছু স্বপ্ন নিয়ে চাকরি ছাড়েন। সেই প্রজেক্ট আর আলোর মুখ দেখেনি। মাঝে কয়েক মাস একটি নিউজপোর্টালে বিশেষ প্রতিনিধি ও প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২২ সালের এপ্রিলে দৈনিক দেশকালে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে সেখানেই কর্মরত আছেন।

একইসঙ্গে তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে ‘ই৩৬৫ ভেঞ্চার্স’ নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান, ‘ই-বিজ ডিজিটাল’ নামে একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি কয়েকজন সাংবাদিক মিলে একাধিক বিশেষায়িত নিউজপোর্টাল গড়ার চেষ্টা করছেন।

সাংবাদিক সংগঠন
জুবায়ের রহমান চৌধুরী দেশের সর্ববৃহৎ সাংবাদিক সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নির্বাচিত কল্যাণ সম্পাদক (২০২২-২৪)। আগের কমিটিতেও (২০২০-২২) তিনি নির্বাহী পরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়াও তিনি আঞ্চলিক ও কয়েকটি বিটভিত্তিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে জার্নালিস্ট ইউনিটি অব বাংলাদেশের (জেইউবি) যুগ্ম সম্পাদক তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার (বিজেএফডি) প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পর্যটন বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন গাঙচিল সাংবাদিক ফোরামের দফতর সম্পাদক তিনি। এছাড়াও সংস্কৃতি ও বিনোদন সাংবাদিকদের রেজিস্টার্ড সংগঠন ঢাকা কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) স্থায়ী সদস্য। দেশের সবচেয়ে পুরনো সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতিরও (বাচসাস) সদস্য তিনি।

ব্যবসায়িক সংগঠন
জুবায়ের রহমান চৌধুরী একজন তরুণ উদ্যোক্তা। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য গড়ে তুলছেন ‘অন্ট্রাপ্রেনিওরস বিজনেস ক্লাব (ই-বিজ ক্লাব)।’ তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তিনি ‘অন্ট্রাপ্রেনিওরস ক্লাব অব বাংলাদেশের (ই-ক্লাব)’ একজন রেজিস্টার্ড সদস্য।

পারিবারিক জীবন
জুবায়ের রহমান চৌধুরীর স্ত্রীর নাম ফারজানা ইয়াসমিন। তিনি মূলত গৃহিনী। তবে উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনায় হোমমেড বেকিং আইটেম নিয়ে কাজ করছেন। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান জারিফ রহমান চৌধুরী নার্সারি শ্রেণিতে পড়ছে।

পুরস্কার ও সম্মাননা
সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি সম্মাননা ২০১৮ লাভ করেন।

অন্যান্য
জুবায়ের রহমান চৌধুরী স্কুল জীবন থেকেই সংগঠনমনা। নিজেদের মধ্যে পাঠোভ্যাস বাড়াতে ২০০১ সালে বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেন ‘নওল কিশোর গ্রন্থাগার’। তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ার সেই সংগঠনটিই এখন ‘নওল কিশোর ফাউন্ডেশন’ নামে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

তিনি গ্রন্থাগার আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত। বই পড়ুয়াদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘বইসমগ্র’ নামে একটি প্রকাশনী সংস্থাও। দেশজ শুদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশে নিজেকে যুক্ত রাখেন তিনি। অনিয়মিত হলেও গান লিখেন তিনি।

২০১২ সালে স্কুলবন্ধু প্রয়াত সংগীতশিল্পী বর্ণ চক্রবর্তীর আয়োজনে জুবায়ের চৌধুরী কথায় দেব চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘কাছে আসার ইচ্ছে থেকে’ শিরোনামে একটি গানচিত্র রিলিজ হয়। এর পর ২০১৪ সালে ‘ভেজা মন’ শিরোনামে আরেকটি গান প্রকাশ পায়। দীর্ঘ বিরতির পর ২০২৩ সালের ১০ মার্চ মুক্তি পায় জুবায়ের চৌধুরীর গানচিত্র ‘রাঙা পরী’। গানটিতে কণ্ঠ মেলান সুলতান মাহমুদ ও বৃষ্টি দোলা।